ইন্টারন্যাশনাল সেফটি অ্যাকর্ড

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। দেশের রপ্তানির ৮০ শতাংশ আসে গারমেন্ট সেক্টর বা পোশাক খাত থেকে এবং যেখানে দেশের ৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক কর্মরত। এই শ্রমিকরা এই শিল্পের সবথেকে খারাপ কিছু পরিস্থিতির যেমন,  দারিদ্র্য মজুরি, মৌখিক এবং শারীরিক নিগ্রহ, অত্যন্ত বিপজ্জনক কারখানা ভবন এবং কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উত্তম পরিস্থিতির পক্ষে সমর্থন করার জন্য প্রতিশোধ -এর মুখোমুখি হন।

২০০৫ সাল থেকে, এইরকম বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতিতে প্রায় ২০০০ বাংলাদেশী শ্রমিক অগ্নি এবং নির্মাণ নিরাপত্তা  সংক্রান্ত বিপর্যয়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছেন - যার সবগুলোই প্রতিরোধ করা যেত। ২০১৩ সালের এপ্রিলে, কেবল রানা প্লাজা ভবন  ধসেই ১১৩৪ জন শ্রমিক মারা যায়, যা এই শিল্পের  ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করে। রানা প্লাজার কারখানাগুলি জেসিপেনি (JCPenney), দ্য চিল্ড্রেন’স প্লেস  (The Children’s Place)এবং ওয়ালমার্ট (Walmart) সহ বেশ কয়েকটি বড় ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতার জন্য উৎপাদন করছিল। এই ভবন ধসের আগের কিছু মাসেই, ওখানে অবস্থিত কোম্পানিগুলির মধ্যে অনেকগুলো কোম্পানির কারখানাতেই অডিট হয়েছিল, কিন্তু সেই অডিটগুলি নিরাপত্তা লঙ্ঘনগুলোকে  চিহ্নিত করতে বা সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়েছে যার ফলস্বরূপ এইরকম বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

একটি নতুন মডেলঃ দ্য অ্যাকর্ড

কারখানায় প্রকৃত নিরাপত্তার উন্নতি ঘটাতে বাংলাদেশে অগ্নি ও নির্মাণ নিরাপত্তা   বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি মৌলিকভাবে পরিবর্তন করার জন্য পোশাক ব্র্যান্ডগুলিকে চাপ দেওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে কাজ করছে। বিপর্যয়ের পরে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ব্র্যান্ডগুলিকে দর কষাকষিতে ফিরে যেতে বাধ্য করেছিল এবং ডবলু আর সি এবং আমাদের সহযোগীরা সফলভাবে তাদের বাংলাদেশে বিল্ডিং এবং ফায়ার সেফটি সংক্রান্ত ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি করিয়েছিল। অ্যাকর্ড হল শ্রমিক, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার এবং পোশাক কোম্পানির মধ্যে প্রথম আধুনিক আইনত বাধ্যতামূলক চুক্তি যার জন্য ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতাদের প্রয়োজনঃ

  • যোগ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীদের দ্বারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পরিদর্শনের জন্য তাদের সরবরাহকারী কারখানাগুলি খুলে দিন
  • এই পরিদর্শনের ফলাফলগুলি সার্চযোগ্য ডাটাবেসে সর্বজনীনভাবে রিপোর্ট করার অনুমতি দিন
  • প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সংস্কারের জন্য অর্থ প্রদানে সহায়তা করুন
  • প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা মেরামত করতে ব্যর্থ যে কোনও কারখানার সাথে ব্যবসা করা বন্ধ করুন

উপরন্তু, অ্যাকর্ড একটি অভিযোগ প্রক্রিয়ার রূপরেখা দেয় যার মাধ্যমে শ্রমিকরা বেনামে তাদের কারখানায় সম্ভাব্য লঙ্ঘন অ্যাকর্ডে রিপোর্ট করতে পারে। এটিতে একটি এনফোর্সমেন্ট মেকানিজমও রয়েছে যার মাধ্যমে যে সব স্বাক্ষরকারীরা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অ্যাকর্ড পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা লঙ্ঘন কিভাবে মোকাবেলা করা হবে তার একটি মৌলিক পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে। পূর্ববর্তী কর্পোরেট-নেতৃত্বাধীন কার্যক্রম গুলি স্বতঃস্ফুর্ত ছিল এবং এই কার্যক্রম গুলিতে প্রয়োগ প্রক্রিয়া এবং স্বচ্ছতা উভয়েরই অভাব ছিল। অ্যাকর্ডের অধীনে, ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতারা তাদের পোশাক তৈরি করে যেসব শ্রমিকরা তাদের নিরাপদ অবস্থায় কাজ করা নিশ্চিত করার জন্য আইনত দায়বদ্ধ।   

 

দ্য অ্যাকর্ড টুডে

প্রায় ২০০টি ব্র্যান্ড এবং খুচরা বিক্রেতা ২০১৮ অ্যাকর্ডে স্বাক্ষর করেছে, যা মূল চুক্তিটি অতিরিক্ত তিন বছরের জন্য বাড়িয়েছে। স্বাক্ষরকারী ব্র্যান্ডগুলির মধ্যে বিশ্বের চারটি বৃহত্তম ফ্যাশন খুচরা বিক্রেতার (রিটেলার) মধ্যে তিনটি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে – এইচ&এম (H&M), ইন্ডিটেক্স (Inditex) এবং উনিকলো (UNIQLO)৷ একত্রে, এই ব্র্যান্ডগুলির বস্ত্র বাংলাদেশের ১৬০০ টিরও বেশি কারখানায় তৈরি হয়, যেগুলি সম্মিলিতভাবে দুই মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক নিয়োগ করে। এই কারখানাগুলিতে পরিদর্শনে প্রায় 130,000 নিরাপত্তা লঙ্ঘন উন্মোচিত হয়েছে, কাঠামোগত ক্ষতি থেকে শুরু করে অনিরাপদ আগুন থেকে বাঁচার পথ পর্যন্ত। আজ অবধি, এই নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলির সিংহভাগই বাদ দেওয়া হয়েছে৷ ১লা জুন, ২০২০-এ, অ্যাকর্ডের বাংলাদেশ কার্যালয়, একটি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় সংস্থা, রেডি-মেড-গার্মেন্ট সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল (RSC) এর কার্যাবলীতে স্থানান্তরিত করেছে। বাংলাদেশে অ্যাকর্ডের নির্ধারিত নিরাপত্তা কর্মসূচির বাস্তবায়নকারী এজেন্ট হিসেবে আর এস সি (RSC)-কে প্রতিষ্ঠিত করা হলেও, এটি কখনোই অ্যাকর্ড চুক্তির প্রতিস্থাপনের উদ্দেশ্যে ছিল না; অ্যাকর্ড চুক্তির অধীনে ব্র্যান্ডের বাধ্যবাধকতাগুলি কার্যকর এবং অপরিবর্তিত ছিল ৩১শে আগস্ট, ২০২১-এ চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত—একটি তিন মাসের এক্সটেনশনের সমাপ্তির পর।

ইউনিয়ন এবং শ্রম অধিকারের সহায়করা বাংলাদেশে অ্যাকর্ড মডেলটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বাধ্যতামূলক উত্তরসূরি চুক্তির প্রস্তাব করেছে- যেখানে এটি শত শত, সম্ভবত হাজার হাজার শ্রমিকের মৃত্যু এড়াতে পেরেছে এবং যেখানে হয়ত এখনও অনেক কারখানার সংস্কারের প্রয়োজন আছে- এবং মডেলটিকে পাকিস্তানের মতো অন্যান্য দেশে প্রসারিত করেছে যেখানে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জীবন নিয়মিত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ২০২১ সালের গ্রীষ্মে (সামার) আলোচনার সফল ফলাফল নিশ্চিত করেছে যে অ্যাকর্ড বাংলাদেশে যে ব্যাপক লাভ করেছে তা বজায় রাখা এবং প্রসারিত করা হবে। এই নতুন ২৬ মাসের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চুক্তি, যা ১লা সেপ্টেম্বর, ২০২১ থেকে কার্যকর হয়েছে, বাংলাদেশ অ্যাকর্ড দ্বারা প্রতিষ্ঠিত গ্রাউন্ড ব্রেকিং মডেলের গুরুত্বপূর্ণ সব উপাদানগুলি বজায় রাখে: ব্র্যান্ডের প্রতিশ্রুতিগুলির আইনি প্রয়োগযোগ্যতা, ব্র্যান্ডের সম্মতির স্বাধীন তত্ত্বাবধান, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করার জন্য সরবরাহকারীদের (সাপ্লায়ার) যথেষ্ট মূল্য প্রদানের দায়বধ্যতা এবং নিরাপদে কাজ করতে অস্বীকার করে এমন কোনো কারখানার সাথে ব্যবসা করা বন্ধ করার দায়বধ্যতা। এই মডেলটি, যা বাংলাদেশে অগণিত জীবন বাঁচিয়েছে, এখন অন্যান্য দেশেও প্রসারিত হবে যেখানে শ্রমিকদের জীবন প্রতিদিন ঝুঁকির মধ্যে থাকে। ১৭০টিরও বেশি পোশাক কোম্পানি টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট শিল্পে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

 

ডবলু আর সি (WRC) এর ভূমিকা 

ডব্লু আর সি অ্যাকর্ড বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। অ্যাকর্ড স্টিয়ারিং কমিটির একজন সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষরকারী হিসাবে, ডব্লু আর সি স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যদের সাথে কাজ করে যাতে অ্যাকর্ডের নীতিগুলি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা হয় এবং পরিদর্শন ও মেরামত সময়মত ও নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে হয়।