‘শহীদুল ইসলাম হত্যার প্রতিক্রিয়ায় WRC’র বিবৃতি’

আন্তর্জাতিক শ্রমিক অধিকার সম্প্রদায়ের সাথে একাত্ম হয়ে ‘শ্রমিক অধিকার সংঘ’ (Worker Rights Consortium, WRC) বাংলাদেশ গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের (BGIWF)  নেতা, শ্রমিক আন্দোলনের দীর্ঘদিনের বন্ধু শহীদুল ইসলামের নৃশংস হত্যায় শোক ও নিন্দা জ্ঞাপন করছে। তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে এবং বাংলাদেশের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের বন্ধুদের মতো আমরাও এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকাহত ও সমব্যাথী; তাঁদের প্রতিও আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।

শহীদুল ইসলাম নিজে একজন গার্মেন্ট শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন এবং তারপর তাঁর জীবনের ২৫টি বছর অক্লান্ত লড়াই করেছেন, এবং শ্রমিক আন্দোলনকেই তাঁর জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের জুন মাসের ২৫ তারিখে সন্ধ্যায় ঢাকার ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার্স লিঃ’ ফ্যাক্টরির বাইরে শহীদুল ইসলামের ওপর হামলা করা হয়েছিল, যা পরেরদিন ২৬ জুন তারিখে টঙ্গি (পশ্চিম) পুলিশ স্টেশনে অভিযোগ দায়েরের সময় ‘প্রথম তথ্য প্রতিবেদনে (FIR)’ উল্লেখ করা হয়। এই হামলার ঘটনা কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে ওই রপ্তানীমূখী প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শ্রমিকের দুই মাসের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস পরিশোধের বিষয়ে শান্তিপূর্ণ বৈঠকের পর ঘটানো হয়।

প্রতিবেদনের বর্ণনা অনুসারে,  কারখানা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-বোনাস দাবি করার জন্য শাহীদুলসহ তাঁর দুইজন সহকর্মী শ্রমিক সংগঠককে একটি সংগঠিত গ্রুপ আক্রমণ করে; এবং তাদের উপর্যুপরি ও এলোপাথাড়ি লাথি-ঘুসির আঘাতে শহীদুল অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং পরে তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশের রিপোর্টের সমস্ত তথ্য-বিবরণীর বিষয়ে WRC স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত হতে না পারলেও, ‘প্রিন্স জ্যাকার্ড সোয়েটার’ কারখানার শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণেই যে শাহিদুলের ওপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট তথ্য আমাদের আছে।

বাংলাদেশে ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রমিকদের সংগঠিতভাবে তাঁদের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার ক্ষমতা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ,  সেখানে পোশাক কারখানাগুলিতে স্বাধীন ইউনিয়নের বিদ্যমানতাও কম এবং শ্রমিকরা সংগঠিত হওয়ার তৎপরতা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রচণ্ড বাঁধা ও প্রতিহিংসার সম্মুখীন হতে হয়। ট্রেড ইউনিয়নকর্মী এবং শ্রমিকদের ওপর হত্যা ও আক্রমণ তাদেরকে সংগঠন করার মৌলিক অধিকার ভোগ করার চর্চাকে আরও হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়, যা বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত।  

শহীদুল হত্যার ঘটনায় একটি পরিপূর্ণ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত খুবই জরুরি এবং এর ফলাফল দেশের শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। ২০১২ সালে ‘বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (BCWS) এর বিশিষ্ট শ্রমিক অধিকার সংগঠক আমিনুল ইসলামের অপহরণ, নির্যাতন ও পরবর্তীতে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার সম্প্রদায়কে হতবাক করেছিল। তাঁর মৃত্যু শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তাঁর আত্মোৎসর্গের প্রতি প্রতিশোধ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।

এক দশকেরও বেশি সময় পরেও তাঁর হত্যা অমীমাংসিতই রয়ে গেছে এবং ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন ও সহিংসতাও অব্যাহত রয়েছে। আমরা WRC-এর পক্ষ থেকে BGIWF, BCWS এবং বাংলাদেশের বৃহত্তর ট্রেড ইউনিয়ন সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে, যারা আবারও এই মর্মান্তিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে। আমরা এইসকল সামনের সারির শ্রম অধিকার সংগঠনগুলির পাশে আছি, যারা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের কলেজিয়েট কারখানাগুলোতে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো প্রকাশ ও সমাধানে সহায়তা করেছে আসছে। বিজিআইডব্লিউএফ, বিসিডব্লিউএস, এবং বাংলাদেশের ব্রোডার সিন্দিকেট সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখের ব্যক্তি করছি আমরা। আমরা এই প্রমুখ শ্রমিক গ্রুপগুলির সাথে দাঁড়িয়ে আছি যারা বাংলাদেশের কলেজিয়েট কারখানাগুলিতে শ্রমিক অধিকারের লঙ্ঘন উদ্ঘাটনে এই ব্যাপক দুঃখজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন।